Wednesday, February 6, 2019

ফিডার গরম পানিতে পরিষ্কার করলেন তো ডায়রিয়াকে বাবুর কাছে ডাকলেন!


ভাবী কল করেছিলেন। জানিস তোর ভাতিজার আবার ডায়রিয়া হয়েছে, খুব খারাপ অবস্থা। বাবুর বয়স এগারো মাস। শুনে খারাপ লাগছিল। বার বার ডায়রিয়া হলে ওয়াটার সলুবল ভিটামিন (পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন যেমন- ভিটামিন বি ভিটামিন সি) এর ঘাটতি দেখা যায়। যা বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক গঠনে খুব খারাপ ইফেক্ট ফেলে। ভাবীকে বলার সাহস পাচ্ছিলাম না যে বাবুর খাবার ঢেকে রাখেন কিনা? কারণ ভাবী যে খুবই পরিচ্ছন্ন আর গোছালো সেটা বাড়ির সবাই জানে। নিজেই বলল বাবুর খাবার দাবারের ব্যাপারে এত সচেতন থাকি তবুও এসব হচ্ছে কেন বলেই স্বভাবসিদ্ধ কাঁদতে শুরু করল।

আরে কান্নার কি আছে? আচ্ছা বাচ্চা কি ফিডার ইউজ করে?
হ্যাঁ। কিন্তু আমি তো ফিডার শেষ হওয়ার পর প্রায় আধাঘণ্টা গরম পানিতে ফুটাই। হেসে ফেললাম। বললাম ভাবী ভাতিজার সমস্যা তো ধরে ফেলেছি।
ভাবী তো অবাক।
বললাম আচ্ছা কাঁচা ডিম ভেংগে দেখেছেন কী নরম?
হ্যাঁ।
চুলায় গরম পানিতে সিদ্ধ করলে কেমন হয়?
কেন অনেক শক্ত?
এখানেই আপনার ঝামেলা। দুধেও প্রোটিন থাকে। আপনি বাচ্চাকে ফিডার খাওয়ানোর পর ফিডারের গায়ে কিছু দুধ তো লেগে থাকেই সেটা দেখা যাক বা না যাক। এই অবস্থায় আপনি যখন সেই ফিডারকে গরম পানিতে দিচ্ছেন তখন দুধের প্রোটিংগুলো বোতলের গায়ে শক্তভাবে লেগে যাচ্ছে। আর এগুলো অনেক দিন ধরে বোতলের গায়ে থাকে ফলে জীবানু খুব সহজেই আক্রমন করে এদের। আবার ঐ বোতলেই দুধ দিচ্ছেন আর ভাতিজা দুধের সাথে জীবানু খেয়ে সব বের করে দিচ্ছে।

আমার লেকচারে ভাবির কান্না কোথায় হারিয়ে গেছে বলল তাহলে কি করব?
বললাম কেন ঠান্ডা পানি আছে না? ঠান্ডা পানিতে তো আর প্রোটিন জমে না ।
প্রথম দুই বছরে বাচ্চাদের ডায়রিয়া হওয়া খুব ক্ষতিকর। আর অনেক পরিচ্ছন্ন মায়েরাই এই ছোট্ট ভুলের জন্য নিজেরাতো কষ্টে ভোগেনই বাচ্চার ও ভবিষ্যত গ্রোথকে স্লো করে দেন।
তাই বাচ্চার ফিডার আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে বা প্রয়োজনে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর গরম পানিতে ফুটিয়ে জীবানুমুক্ত করুন। প্রথমেই গরম পানিতে ধুয়ে জীবানুযুক্ত করে সর্ষেতে ভুত ঢুকাবেন না, ডায়রিয়াকে বাবুর কাছে ডাকবেন না।

লেখক: ডা. মোবাশ্বের আহমেদ নোমান
অ্যাসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার, সার্জারি, 
রংপুর আর্মি মেডিকেল কলেজ।
(সংগৃহীত)

ভালো থাকুন | School of Awareness

No comments:

Post a Comment