সন্তান প্রসবের জন্য আপনাকে কিছুদিন হাসপাতালে থাকতেই হবে। তাই হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে কিছু প্রস্তুতি নেয়া উচিত । তা না হলে দেখা যাবে আপনার স্বামীকে বারবার হাসপাতাল আর বাসায় দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। এটি যদি হয় আপনার প্রথম সন্তান তাহলে আপনি অনেক কিছু সম্পর্কে অবগত নাও থাকতে পারেন। হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে আপনার এমন কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী আপনার সঙ্গে থাকা উচিত যা হাসপাতালে অবস্থানের সময়টা আপনার সুন্দর কাটবে। সুতরাং জেনে নিন এমন কিছু বিষয় যা না জানলেই নয়।
(১) প্রেসক্রিপশন:
ব্যাগে অবশ্যই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, বিভিন্ন টেস্ট রিপোর্ট, প্রয়োজনীয় ঔষধ যথাস্থানে গুছিয়ে রাখুন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় এবং আপনার যথাযথ ডায়াগনোসিসের জন্য এসব প্রেসক্রিপশন, রিপোর্ট অবশ্যই প্রয়োজন হবে। রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশনের জন্য একটি ফাইল মেইনটেইন করুন যা সহজেই খুঁজে পাবেন।
(২) বিছানার চাদর, বালিশ, কাঁথা বা পাতলা কম্বল:
শারীরিক সুস্থতার পূর্বশর্ত হল মানসিক সুস্থতা। অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায় যে নিজের বিছানা, বালিশ, চাদর, কম্বল ছাড়া নিদ্রা দেবীর দেখা মেলাই ভার হয়ে দাঁড়ায়। আর হাসপাতালের বিছানার কথা ভাবলেই গা গুলিয়ে উঠে। কিন্তু নিরুপায় ও জটিল অবস্থার শরণাপন্ন? নার্সিং হোম এ তো যেতেই হবে। কোনো ভাবাভাবি ছাড়া চটজলদি নিজের প্রয়োজনীয় দু’খানা বিছানার চাদর, পাতলা কাঁথা, যদি সময়টা হয়ে থাকে শীতকাল তবে পাতলা কম্বল আর সুযোগ থাকলে নিজের অতি প্রিয় নিত্যসঙ্গী বালিশ খানাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। আর যাই হোক, মাতৃত্বের মত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের মনকে কিছুটা মুহূর্তের জন্য হলেও রিলাক্স রাখার চেষ্টা বইকি।
(৩) শিশুর জন্য কাপড়:
আমরা অনেকেই আসন্ন ডেলিভারির চিন্তায় এতই টেনশনে থাকি যে নবজাতকের সুরক্ষার কথা একেবারেই ভুলে যাওয়ার যোগাড় হয়। নবজাতকের আগমন পরবর্তী মুহূর্তগুলো যাতে সুরক্ষিত ও নিরাপদ হয় সে কথা মাথায় রেখে কিছু হাল্কা সুতি কাপড়ের কাঁথা, ন্যাপকিন, আরামদায়ক ডায়াপার, নরম বেবি তোয়ালে ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছেই রাখুন ।
(৪) জামাকাপড়:
বেশ কয়েকদিনের হিসাব করে পরিস্কার জামাকাপড় নিয়ে নিন। গর্ভবতী মায়েদের জন্য সুতির হালকা আরামদায়ক জামাকাপড় সঙ্গে রাখা উচিত। যদি শীতকাল হয়ে থাকে তাহলে গরম জামাকাপড় ব্যাগে রাখতে ভুলবেন না।
(৫) নরম তোয়ালে:
আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে তোয়ালে অবশ্যই নিতে ভুলবেন না। এসময় নরম তোয়ালে ব্যবহার করাই উত্তম। তাছাড়া, প্রসবের পর আপনার সন্তানকে পরিস্কার নরম তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে রাখার জন্য কমপক্ষে দুটি তোয়ালে ব্যাগে রাখবেন।
(৬) স্লিপার ও মোজা:
নরমাল হাঁটাচলার জন্য এবং ওয়াশরুম এ ব্যবহারের জন্য আলাদাভাবে দু’ জোড়া স্যান্ডেল অবশ্যই সাথে রাখুন। তবে খেয়াল রাখবেন স্যান্ডেল গুলো যাতে স্লিপারি না হয়। হাঁটাচলায় সাবধান থাকুন। আর সময়টা যদি হয় শীতকাল তবে সাথে মোজা রাখতে অবশ্যই ভুল করবেন না।
(৭) মোবাইল ফোন, চার্জার, এবং রিচার্জ কার্ড:
ব্যাগ গোছানোর শুরুতেই আপনার মোবাইল ফোনটি সাথে নিন। চার্জারটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা দেখে নিন এবং ব্যাগে যথাস্থানে রাখুন যাতে খুব সহজেই খুঁজে পান। কারণ, প্রয়োজনের সময় এই মোবাইল ফোনটিই হয়ে উঠবে আপনার পরম বন্ধু। মোবাইলের বেশি করে টাকা রিচার্জ করে নিন। দরকার হলে কয়েকটি রিচার্জ কার্ড ব্যাগে রাখুন।
(৮) টয়লেট্রিজ:
বিভিন্ন ধরনের টয়লেট্রিজ সামগ্রী যেমন: টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, হেয়ারড্রায়ার, ডিওডরেন্ট, শ্যাম্পু, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, বডিওয়াশ, টয়লেট টিস্যু, ফেসওয়াশ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস একটি ছোট ব্যাগেগুছিয়ে আপনার মূল ব্যাগে রাখুন। এসব সামগ্রী সঙ্গে থাকলে হাসপাতালের পরিবেশে আপনি কমফোর্টফিল করবেন।
এছাড়া হাল্কা প্রসাধনী যেমন চিরুনি, আয়না, হেয়ার ব্যান্ড, ময়শ্চারাইজার লোশান ইত্যাদি একটি ছোট পার্সে এ গুছিয়ে নিতে পারেন। নিজেকে একটু টিপটপ দেখাতে কে না ভালবাসে, বলুন তো?
(৯) ইলেকট্রিক কেটলী ও পানির বোতল:
আপনার প্রসবের সময়টা যদি শীতকাল হয়, তাহলে আপনার যখন তখন গরম পানির প্রয়োজন হতেপারে। এজন্য পানি গরমের জন্য ইলেকট্রিক কেটলী থাকলে তা খুবই উপকারে দেবে। এছাড়া পানি খাওয়ার জন্য পানির জগ বা বিশুদ্ধ কয়েকটি খাবার পানির বোতল অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
(১০) কাগজ ও কলম:
কথায় আছে, প্রয়োজনের সময় খড়- কুটোটিও পাওয়া যায় না। কোন প্রয়োজনীয় কিছু লিখতে হতেও পারে অথবা যাদের লেখালেখির অভ্যাস আছে তাঁরা তাঁদের এইরকম একটা বিশেষ মুহূর্তে মনের অনেক না বলা অনুভূতির কথা ডায়েরি বা নোটবুক এ লিখে রাখার তাগিদে কাগজ, কলম, ডায়েরি বা নোটবুক নিতে ভুলে যাবেন না যেন।
(১১) শুকনো খাবার:
প্রসবকালীন সময়টা অনেক সময় মুখ শুকিয়ে যায়। এজন্য সবসময় সুগার ফ্রি লজেন্স মুখে রাখা ভাল। আর তাই এক প্যাকেট সুগার ফ্রি লজেন্স, ঔষধ খাওয়ার সময় হালকা কিছু খাওয়ার জন্য কিছু শুকনো খাবার ব্যাগে অবশ্যই রাখবেন।
(১২) ফোন বুক:
উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে আমরা অনেকেই ফোন বুক এর প্রয়োজনীয়তার কথা মনেই রাখিনা। কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমনটি হতেই পারে যে আপনার মোবাইল এর চার্জ শেষ, ফোন সুইসড অফ, অথচ আপনার এমন একজনকে ফোন করা দরকার যার নাম্বারটি আপনার মোবাইল এই সেভ করা ছিল। সেই মুহূর্তেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি ফোন বুক এর উপকারিতা। সুতরাং সাথে ফোন বুক টি রাখতে ভুল করেও ভুলে যাবেন না যেন।
(১৩) সময় কাটানোর জন্য বই/ম্যাগাজিন:
মানসিক অবসাদ কাটাতে বই বা ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস অনেকেরই দেখা যায়। মনকে প্রশান্তি দেয় এমন বই বা ম্যাগাজিন সাথে রাখলে আপনার প্রিয় সঙ্গীর মতই সঙ্গ দেবে সেই বই বা ম্যাগাজিন।
(১৪)ডায়াপার এবং স্যানিটারি ন্যাপকিনঃ
প্রসবের পর কিছু সময় পিরিয়ডের মতোই রক্ত যেতে পারে (তবে এটি পিরিয়ড না)। তাই ভাল মানের স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে নিন। আর নবজাতকের ত্বক পরিচ্ছন্ন ও আর্দ্রতামুক্ত রাখার জন্য বেবি ওয়াইপস এবং উচ্চ শোষণক্ষমতা যুক্ত ডায়াপার নিয়ে নিন।
(১৫) অতিরিক্ত অর্থ :
শুধু ডেলিভারি বলেই নয়, যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে অতিরিক্ত কিছু টাকা সাথে রাখুন। যদি নিজের কাছে রাখার মত পরিস্থিতি না থাকে তবে বিশ্বস্ত কারো কাছে দিয়ে রাখবেন যেন দরকারে চেয়ে নিতে পারেন।
এ কথা জানেন তো? যে কোনো কাজের পূর্ব প্রস্তুতিই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। ডেলিভারির জন্য যেহেতু মাতৃসদনই আপনার গন্তব্যস্থল তাই যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি ঐ সময়টায় আপনাকে রিলাক্সে থাকতে অনেক সাহায্য করবে। যদি ঐ সময় আপনার হাতের কাছে সব গুছানো না পান তবে কি আপনার মনের দিক থেকে আদৌ স্বাভাবিক থাকা সম্ভব? ধরুন, প্রয়োজনের আপনার মোবাইল ফোনের চার্জারটা নিতে ভুলে গেলেন বা আপনার এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা নিতেই আপনার মনেই নেই, তখন ভাবুন তো আপনার মনের অবস্থা কি হবে? তাই হাসপাতালে যাওয়ার আগে এই লিস্ট দেখে আপনি সহজেই আপনার ব্যাগটি গুছিয়ে নিতে পারেন। আপনার সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক মাতৃত্বই সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতীক। অনাগত শিশুর সুন্দর পরিপূর্ণতা নির্ভর করে মূলত একটি সুন্দর, গোছানো আগমনী প্রস্তুতির উপর।
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness